জরায়ু ফাইব্রয়েড: প্রকারভেদ, কারণ, লক্ষণ ও ঝুঁকি
পরিচিতি
জরায়ু ফাইব্রয়েড হল জরায়ুর একটি সাধারণ টিউমার, যা সাধারণত মহিলাদের প্রজনন বয়সে দেখা যায়। এই ফাইব্রয়েডগুলি জরায়ুর পেশী কোষ ও অন্যান্য টিস্যুর মিশ্রণে তৈরি হয় এবং সাধারণত নন-ক্যান্সারোজ। সুতরাং আমরা জরায়ু ফাইব্রয়েড কি তা সম্পর্কে জানলাম। জরায়ু ফাইব্রয়েড সাধারণত মারাত্মক নয়, তবে এটি মহিলাদের স্বাস্থ্যে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ফাইব্রয়েডের প্রকারভেদ
জরায়ু কথায় অবস্থিত এবং কিভাবে সংযুক্ত এর উপরে ভিত্তি করে। জরায়ু ফাইব্রয়েড অনেক প্রকার। তবে নিদিষ্ট চার ধরনের হয়ে থাকে:
- ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড: এই ফাইব্রয়েডটি জরায়ুর পেশী স্তরের মধ্যে অবস্থান করে এবং এটি জরায়ুর আকার পরিবর্তন করতে পারে।
- সাবসারোসাল ফাইব্রয়েড: এটি জরায়ুর বাইরের দিকে বা বাইরের টিস্যুর উপর অবস্থিত হয়। এই ফাইব্রয়েডগুলি সাধারণত কম সমস্যার সৃষ্টি করে।
- পেডুনকুলেটেড ফাইব্রয়েড: এই ফাইব্রয়েডগুলি জরায়ুর বাইরের দিকে একটি স্টেমের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং এই ধরনের ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি সাধারণত ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- সাবমিউকোলাস ফাইব্রয়েড: এই ফাইব্রয়েডগুলি জরায়ুর ভিতরের আস্তরণের নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।
জরায়ু ফাইব্রয়েডের কারণ
জরায়ু ফাইব্রয়েডের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ অন্তর্ভুক্ত:
- হরমোনের প্রভাব: ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখে দুটি হরমোন: ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন। এই হরমোনগুলির স্তর বৃদ্ধি হলে ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি ঘটে। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে ফাইব্রয়েডগুলি দ্রুত বাড়তে পারে।
- জেনেটিক্স: পারিবারিক ইতিহাসও ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের ফাইব্রয়েডের সমস্যা থাকে, তবে একজন মহিলা এটি পেতে পারেন।
- বয়স: মহিলাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বেশি থাকে। এর পরেও ঝুঁকি বাড়তে থাকে, তবে ৫০ বছর বয়সের পর এটি কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন: ওবেসিটি ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। অতিরিক্ত ওজনের ফলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
- জীবনযাত্রার অভ্যাস: অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, যেমন ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক অনুশীলনের অভাবও ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জরায়ু ফাইব্রয়েডে লক্ষণ
অনেক মহিলার ফাইব্রয়েড নিয়ে কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখযোগ্য:
- অতিরিক্ত রক্তপাত: পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। অনেক মহিলার জন্য এটি এতটাই বেশি হতে পারে যে তারা রক্তের কারণে অ্যানিমিয়া DEVELOP করতে পারে।
- পেটের নিচে ব্যথা: এটি সাধারণত তীব্র নয়, তবে সময়ে সময়ে ব্যথা অনুভব হতে পারে। যদি ফাইব্রয়েড বড় হয়, তবে এটি আরও তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- মূত্রাশয়ে চাপ: যদি ফাইব্রয়েড মূত্রাশয়ের কাছে অবস্থান করে, তবে এটি মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, ফলে মহিলাদের মূত্রত্যাগের সমস্যা হতে পারে।
- ব্লোটিং বা ফুলে যাওয়া: এটি পেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং মহিলাদের অস্বস্তি অনুভব করাতে পারে।
- সেক্স করার সময় ব্যথা: ফাইব্রয়েড সেক্স সময় অস্বস্তি বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
জরায়ু ফাইব্রয়েড ঝুঁকির কারণ
ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য কিছু কারণ উল্লেখযোগ্য:
- পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের মধ্যে কারও ফাইব্রয়েড থাকে, তবে এটি মহিলার মধ্যে ফাইব্রয়েডের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
- জীবনযাত্রার অভ্যাস: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এবং ধূমপান ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- হরমোনের পরিবর্তন: যদি মহিলার হরমোনের স্তরে পরিবর্তন ঘটে, যেমন গর্ভাবস্থার সময়, তবে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়ে।
জরায়ু ফাইব্রয়েড চিকিৎসা পদ্ধতি
জরায়ু ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা লক্ষণ ও ফাইব্রয়েডের আকারের উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হল:
- নজরদারি: যদি ফাইব্রয়েডটি ছোট এবং লক্ষণ না থাকে, তবে ডাক্তার সাধারণত এটিকে নিয়মিত নজরদারি করার পরামর্শ দেন।
- ঔষধ: ব্যথা এবং রক্তপাত কমাতে কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। হরমোনাল থেরাপি: যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, যা ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
- সার্জারি: যদি ফাইব্রয়েড বড় হয় এবং গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। বিভিন্ন সার্জারির পদ্ধতি হল: মায়োমেকটমি: ফাইব্রয়েড অপসারণের প্রক্রিয়া। হিস্টেকটমি: জরায়ু সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা।
- অন্যান্য চিকিৎসা: নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন ইউটেরাইন আর্টেরি এম্বোলাইজেশন (UAE), যেখানে ফাইব্রয়েডের রক্ত সরবরাহ কমানো হয়,ও প্রয়োগ করা হতে পারে।
জরায়ু ফাইব্রয়েড প্রতিরোধ
জীবনযাত্রার পরিবর্তন ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি কমাতে কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা যেতে পারে:- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, সবজি ও শস্যদানা সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ।
- শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো।
উপসংহার
এই নিবন্ধে জরায়ু ফাইব্রয়েড কি তা হলো জরায়ু ফাইব্রয়েড একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা বজায় রাখা ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
জরায়ু ফাইব্রয়েড নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা সর্বদা ভালো। এই সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
0 মন্তব্যসমূহ