যীশু কি ঈশ্বর?

যীশু কি ঈশ্বর ছিলেন?

যীশু খ্রিস্টের পরিচয় ও ভূমিকা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রীয় একটি বিষয়। তাই আজকে যীশু কি ঈশ্বর বাইবেল এই বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হচ্ছে অনেক খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন যে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, তিনিই ঈশ্বরের অভ্যন্তরীণ সত্তা এবং তিনিই ঈশ্বর। এই ধারণা বিভিন্ন বাইবেলীয় প্যাশেজে প্রতিফলিত হয়েছে।


যীশু কি ঈশ্বর?

যীশু কি ঈশ্বর বাইবেলের দৃষ্টিকোণ

  • যীশুর ঈশ্বর স্বরূপ: বাইবেল অনুযায়ী, যীশু নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে পরিচয় দেন। যোহন ১০:৩০-এ তিনি বলেন, আমি এবং পিতা এক”, যা তার ঐশ্বরিক সত্তার প্রতি ইঙ্গিত করে। এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে যীশু ঈশ্বরের সাথে একটি অভিন্ন সত্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।
  • যোহন লিখিত সুসমাচার: যোহন ১:১-এ বলা হয়েছে, বাক্যেটি ঈশ্বরের সাথে ছিল এবং বাক্যেটি ঈশ্বর ছিল।” এখানে 'বাক্যে' শব্দটি গ্ৰীক ভাষা লোগোস” থেকে এসছে, যার অর্থ হলো; যেকোনো রকমের যোগাযোগ। যাকে বার্তাও” বলা যেতে পারে। এখানে এর অর্থ হল যীশু খ্রীষ্ট। এখানে শব্দটি যীশুর প্রতি নির্দেশ করে এবং এই প্যাসেজটি যীশুর ঈশ্বরত্বের ধারণাকে সমর্থন করে।
  • ঈশ্বরের প্রকৃতির প্রকাশ: যীশু বিভিন্ন সময় ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণাবলী প্রকাশ করেছেন। যেমন তিনি রোগীকে ভালো করেছেন, মৃতকে জীবিত করেছেন, বোবাকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, অন্যকে দেখার শক্তি দিয়েছেন, খঞ্জনি পা দিয়েছেন। এবং মানবজাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মথি ৯:৬-এ বলা হয়েছে, মানুষের পুত্রের জন্য পৃথিবীতে পাপ মাফ করার ক্ষমতা আছে”। এটি যীশুর দানশীলতা ও ক্ষমতার পরিচয় দেয়। যা যীশুকে ঈশ্বর হিসেবে প্রমাণ করে।

ঈশ্বর ও মানবত্বের সমন্বয়

যীশু মানবিক সত্তার অধিকারী ছিলেন এবং তিনি মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ফিলিপীয় ২:৬-৭-এ বলা হয়েছে, তিনি ঈশ্বরের সমান হওয়া সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসহীনভাবে নিজেকে নিলেন এবং একজন দাসের রূপ ধারণ করলেন, এবং মানুষের মতো জন্ম নিলেন। এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে যীশু ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

বিভিন্ন মতামত

যদিও অধিকাংশ খ্রিস্টান যীশুকে ঈশ্বর মনে করেন, তবে কিছু গোষ্ঠী তার মানবিক সত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেন, এবং যীশুকে ঈশ্বর হিসাবে অস্বীকার করেন। উদাহরণস্বরূপ,আরিয়ানবাদ, মরমন, এবং যিহোবা উইটনেস

আরিয়ানবাদীদের মতবাদ

যীশুকে একটি মহান মাণুষ হিসেবে চিহ্নিত করে, কিন্তু তাঁকে পূর্ণ ঈশ্বর হিসেবে বিবেচনা করে না। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যে একটি বিশেষ সত্তা।

মরমনবাদীদের মতবাদ

যীশু হলেন লুসিফারের আত্মিক ভাই এবং যীশু একজন মিথ্যা খ্রীষ্ট। যিনি ত্রাণকর্তার সাথে শুধুমাত্র একটি অতিমাত্রায় সাদৃশ্য বহন করেন।

যিহোবা উইটনেস মতবাদ

যিহোবা উইটনেস বিশ্বাস করেন যে যিশু হলেন প্রধান দূত মাইকেল, সর্বোচ্চ সৃষ্ট সত্তা। এবং ট্রিনিটির মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করে, যীশুকে সৃষ্ট সত্তা এবং পবিত্র আত্মাকে মূলত ঈশ্বরের জড় শক্তি বলে বিশ্বাস করে।

ত্রিত্ববাদ

খ্রিস্টীয় ধর্মে ত্রিত্ববাদ (Trinity) একটি মৌলিক ধারণা। এই বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈশ্বর তিনটি পৃথক সত্তা: পিতা, পুত্র (যীশু), এবং পবিত্র আত্মা। এই তত্ত্ব যীশুকে ঈশ্বরের সাথে একটি অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে। মথি ২৮:১৯-এ যীশুর নির্দেশনা অনুসারে, তাদেরকে পিতার, পুত্রের এবং পবিত্র আত্মার নামে ব্যাপ্ত করুন।

উপসংহার

যীশু কি ঈশ্বর ছিলেন এই নিয়ে ঈশ্বরত্বের প্রশ্ন খ্রিস্টীয় ধর্মের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি। বাইবেলের বিভিন্ন প্যাসেজ এবং তার কার্যাবলী এই ধারণাকে সমর্থন করে। যীশু শুধু একজন মহান শিক্ষক বা ধর্মীয় নেতাই নন, বরং তিনি মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের সঠিক প্রকাশ। এবং তিনি ঈশ্বর ছিলেন। খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হলো এই সত্য যে যীশু খ্রিস্ট আমাদের জন্য ঈশ্বরের প্রেম ও দয়ার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

এই আলোচনা শুধু বাইবেলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং বিভিন্ন ধর্মীয় এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও গুরুত্বপূর্ণ। যীশু খ্রিস্টের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য যে পথ দেখানো হয়েছে, তা আজও মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ